আমার বান্ধবীর ডিভোর্সের পর তাকে তার বাবা মা গ্রহণ করেনি বলে আমি আমার বাসায় তাকে জায়গা দিয়েছিলাম। আমার শাশুড়ি অবশ্য রাগ করেছিলেন এতে। তিনি কিছুতেই চাননি আমার বান্ধবী এখানে উঠুক। তিনি আমায় ধমকের গলায় বলেছিলেন, দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষার শখ হয়েছে তাই না? আমার খুব রাগ পেয়েছিল শাশুড়ির উপর। তবে আমার বর আমায় সাপোর্ট করেছিল। সে নিজেই তার মাকে বুঝিয়ে বলেছিলো, তার নিজের বোন যদি এমন বিপদে পড়তো তবে কি মা তাকে জায়গা না দিয়ে পারতেন? আমার শাশুড়ি শেষে রাজি হলেন। আমিও ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। বান্ধবীকে সাথে নিয়ে খুব ভালো সময় কাটছিল আমার। কিন্তু দু মাস পর হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম, এখানে গোপনে কিছু একটা ঘটছে। এরপর নিজের চোখেই একদিন দেখলাম আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বান্ধবীর কাছাকাছি আসা। তাদের একান্ত গোপন মুহূর্ত। এরপর আমার বরের সঙ্গে আমার এসব নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি হয়। নানা ঝামেলা হয়।
বান্ধবীর অবৈধ সম্পর্ক…
তারপরের দিনগুলো একদম পাল্টে গেল। আমার স্বামী আর আমি একই ছাদের নিচে থেকেও যেন অনেক দূরে। কথাবার্তা বলতে গেলে ঝগড়া হয়ে যায়, অথচ তার সাথেই আমার জীবনের সবচেয়ে নিরাপদ সম্পর্ক ছিল বলে মনে করতাম। মনে হচ্ছিল সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্কও আর আগের মতো রইলো না। ভরসা করে আশ্রয় দিয়েছিলাম, আর সে-ই কিনা আমার সুখের সংসারে বিষ ঢেলে দিলো।
আমার স্বামী সেদিন আমার সামনে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু আমি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সে বলল, “আমার কিছুই হয়নি, তোমার ভুল ধারণা হয়েছে।” আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, “আমি নিজ চোখে দেখেছি! তুমি কি আমাকে মিথ্যে বলতে চাচ্ছ?” সে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, তারপর আস্তে আস্তে বলল, “আমি জানি, তোমার মনে অনেক কষ্ট। কিন্তু তুমি যা দেখেছো সেটা সত্যি নয়, ওটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল।”
আমি কথা বাড়ালাম না, তবে আমার ভিতরে একটা প্রশ্ন বারবার জাগছিল—আমি কি মিথ্যে দেখেছি? যদি সবকিছু ভুল বুঝে থাকি, তবে কেন এমন অনুভব করছি? আমার বান্ধবীও একই কথা বলেছিল, “তুই যা দেখেছিস, সেটা আসলে এমন কিছু নয়। আমরা স্রেফ কথা বলছিলাম, আর কিছু না।” কিন্তু আমি জানতাম, কথা বলার সময় মানুষের এমন কাছাকাছি আসা লাগে না।
আমার শাশুড়ি সবকিছু শুনে চুপচাপ থাকলেন। তিনি যেন কিছু বললে আরও সমস্যা বাড়বে বলে ভয় পাচ্ছিলেন। তার চোখে একটা সন্দেহের ছায়া দেখেছিলাম, তবে তিনি কিছু বললেন না। আমিও তাকে কিছু বললাম না, কারণ জানতাম যে আমার সঙ্গে একই ছাদের নিচে থাকার কারণে তিনি আরও খারাপ কিছু ভাবতে পারেন।
আরও পড়ুন
- বাসর ঘরে চোর
- গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন উপলক্ষে গিফট!
- পৃথিবীর শেষতম এই রাস্তায় একা একা হাঁটাচলা বা গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ
আমি ঠিক করলাম, একদিন বাড়ির সবাই বাইরে থাকবে, তখন আমি বাড়িতে লুকিয়ে থাকবো। আমি দেখতে চাইছিলাম, সত্যিই কিছু ঘটছে কি না। আমি জানতাম এটা করতে আমার ভীষণ খারাপ লাগছে, তবে আমার মনে শান্তি ছিল না। আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না যে আমার স্বামী আমার সঙ্গে প্রতারণা করছে।
একদিন সুযোগ পেলাম, আমার স্বামী বলল সে অফিসের কাজে বাইরে যাবে আর বান্ধবীও বলল সে তার এক আত্মীয়ের বাসায় যাবে। আমি সেদিন বাড়ির এক কোনায় লুকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি শুনতে পেলাম আমার স্বামী বাড়িতে ঢুকছে, আর একটু পরেই বান্ধবীও এসে পৌঁছল।
তারা কিছুক্ষণ সাধারণ কথাবার্তা বলল, কিন্তু তারপর তাদের মধ্যে এক ধরনের ঘনিষ্ঠতা দেখতে পেলাম, যা আমার মনে সন্দেহের বীজ বুনে দিলো। তারা যখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরল, তখন আমার চোখে পানি এসে গেল। আমি জানতাম, আমি যা দেখছি, সেটা ঠিক। আমার স্বামী আমার পেছনে আমার বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে। আমি যাকে দয়াকরে আশ্রয় দিলাম সেই কিনা আমার সুখের সংসার নষ্ট করছে।
আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠলাম, “তোমরা এটা কী করছো? আমি কি বোঝার মতো এতটাই নির্বোধ?” আমার স্বামী আর বান্ধবী হতভম্ব হয়ে গেল। আমার স্বামী বলল, “শোনো, আমি তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছি।” কিন্তু সব কিছু নিজের চোখে দেখার পর আমি আর শুনতে চাচ্ছিলাম না। আমি কেবল চেয়েছিলাম সত্যিটা জানাতে।
আমি বললাম, “তোমাদের কোন ব্যাখ্যা আমার দরকার নেই। আমি যা দেখেছি, তা-ই সত্যি। তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো।” বান্ধবী আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “তুই যা দেখেছিস, সেটা একটা ভুল। আমরা শুধুই বন্ধুর মতো ছিলাম।” আমি তখন বললাম, “তুমি আমার বিশ্বাস ভেঙেছো। তোমাকে আশ্রয় দিয়ে আমি অনেক বড় ভুল করেছি। তুমি এখানে আর থাকতে পারবে না।”
সে আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। আমার স্বামী বলল, “তুমি এভাবে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারো না।” আমি বললাম, “এটা আমার বাড়ি। তুমি তোমার কাজ করেছো, আর এখন তুমি যা করেছো তার ফল ভুগবে।”
আমার স্বামী আর বান্ধবী আমার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। তারা কিছু বলার আগেই আমি বললাম, “তোমরা এখনই বেরিয়ে যাও। আমি আর তোমাদের এখানে দেখতে চাই না।” তারা দুজনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
শায়েশা থেকে যে কোন ড্রেস অর্ডার করলেই পাবেন ডিস্কাউন্ট!
আমার শাশুড়ি বাড়ি ফিরে এসে সবকিছু শুনে বললেন, “আমি জানতাম এমন কিছু হবে। কিন্তু তুই কেন আমাকে আগে বললি না?” আমি বললাম, “আমি নিজেই ঠিকমত জানতাম না কি ঘটছে।” তিনি বললেন, “তুই ঠিক কাজ করেছিস। কখনও কখনও আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”
আমি তখন বুঝলাম, আমার নিজের সম্মান রক্ষার জন্য এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি ছিল। আমার বান্ধবী আর স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করে দিলাম। তাদের চলে যাওয়ার পর আমার মন শান্তি পেল। আমি জানতাম, আমি সঠিক কাজ করেছি। এখন আমাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। কষ্ট আছে, কিন্তু একা থাকার মধ্যে এক ধরনের শান্তিও আছে। নিজেকে নতুনভাবে চিনতে হবে। সেই সময়েই বুঝতে পারলাম, আমি আসলে নিজের উপর নির্ভর করতে পারি।
আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।