সেন্সর বোর্ড নিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই প্রতিক্রিয়া এটুকু স্পষ্ট, তিনি বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নজরে আনতে চাইলেন। এমনকি চাইলেন মুখোমুখি বসতেও!
গাহি নো সেন্সরের গান: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
‘গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই লাইন ধরে ‘সেন্সর বোর্ড’ বাতিলের গান গাওয়ার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। যে গানের শিরোনাম দিয়েছেন ‘গাহি নো সেন্সরের গান’!
তার আগেই আজ (১৮ আগস্ট) চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড সংস্কারের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। কারণ এই বোর্ড নিয়ে সিনেমার প্রায় সব স্তরের মানুষের রয়েছে অভিযোগ। যেখানে আটকে আছে অনেক ছবি। সম্ভবত উপদেষ্টার ইচ্ছার সঙ্গে নিজের পরামর্শগুলো যুক্ত করতে চাইলেন ‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা। যে ছবিটি অপ্রকাশিত কারণে আটকে রয়েছে সেন্সর বোর্ডের হিমঘরে।
শায়েশা থেকে যে কোন ড্রেস অর্ডার করলেই পাবেন ডিস্কাউন্ট!
এদিন (১৮ আগস্ট) মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সেন্সর বোর্ডের সংস্কার না করে পুরোপুরি বাতিলের যুক্তি তুলে ধরেন। প্রয়োজনে সিনেমার রেটিং সিস্টেম চালুর পরামর্শও দিয়েছেন নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। আলাপে তুলে এনেছেন প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের প্রসঙ্গও।
শুরুতেই কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন ফারুকী। বলেন, ‘আপনি কি চান বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ছবি হোক? মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান গুমের মতো নিষ্ঠুর এবং অমানবিক যে কাজটা হাসিনা-জিয়াউল-তারেক সিদ্দিকী মিলে করেছে সেটা নিয়ে ছবি হোক? ব্রিগেডিয়ার আজমি বা ব্যারিস্টার আরমানের হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান আমাদের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ ফিল্ম করুক? কেউ তার ছবিতে প্রশ্ন করুক ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণে আমাদের উপস্থিতি ছিল না কেন? অথবা চান উল্টা দিকে কেউ বিএনপির ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে ছবি করুক? তাহলে সেন্সর বোর্ড নামক অথর্ব জিনিসটা বাতিল করেন!’
ফারুকী মনে করেন, এখন যে সেন্সর নীতিমালা রয়েছে, সেটা এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে যে দল ক্ষমতায় থাকবে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনও ছবি আটকে দেওয়া যায়। নির্মাতার চাওয়া, ‘আমরা চাই যে দলই সরকারে থাকুক ফিল্মমেকারদের গলা যেন কেউ চেপে ধরতে না পারে। তার বদলে একটা রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যেখানে বলে দেওয়া হবে কোনটা অ্যাডাল্টদের জন্য, কোনটা প্যারেন্টাল গাইডেন্স লাগবে ইত্যাদি।’
- ‘অ্যানিম্যাল’ দিয়ে বদলে গেল তৃপ্তি দিমরির ক্যারিয়ার
- ‘আয়নাঘর’-এ কেয়া পায়েল! মুক্তির অপেক্ষায়
- কোয়েল মল্লিককে এবার সিরিয়ালে দেখা যাবে
নিজের দেখানো পথের বিপরীতটাও উল্লেখ করেছেন নির্মাতা। বলেছেন, ‘এখন প্রশ্ন আসতে পারে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি একটা ছবি বানায়, যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চরিত্রকে রাজাকার দেখালো কোনও আওয়ামী অন্ধভক্ত ফিল্মমেকার, তখন? অথবা উল্টা দিকে আরেক অন্ধভক্ত একটা ছবি বানালো যেখানে বঙ্গবন্ধু ডিজইনফরমেশন দ্বারা আক্রান্ত হলো? এসব মোটা দাগের বিষয় ঠেকানোর স্পষ্ট বিধান রেখেও নিশ্চয়ই বিধিমালা করা যাবে, যেখানে ফিল্মমেকাররা ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে পারবে। পাশাপাশি আমি জানি ধর্মীয় কিছু সেনসিটিভ ব্যাপার সেইফগার্ড করার কথা বলবেন সরকারি কর্মকর্তারা। এটা নিয়ে তারা আগেও বলেছিলেন। আমার উত্তর, সেখানেও কী বিধান রাখতে চান স্পষ্ট ল্যাঙ্গুয়েজে রাখেন। ভেইগ টার্মে কিছু রাখা যাবে না, যেটার ব্যাখ্যা একশত রকম হতে পারে এবং এই সুযোগ নিয়ে সরকার কাউকে হয়রানি করতে পারে।’
ফারুকী তার এই আলাপে তুলে আনলেন সদ্যবিদায়ী প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপের তিক্ত অভিজ্ঞতাও। স্মৃতি থেকে টেনে ফারুকী বলেন, ‘আমার মনে আছে যে আওয়ামী লীগ সরকার শেষ যে ডামি নির্বাচন করলো, তার আগে আমরা একটা আন্দোলন করেছিলাম সব ফিল্মমেকার মিলে। সেন্সর প্রথার বিরুদ্ধে। তখন আরাফাত সাহেবের সঙ্গে আমাদের একবার মিটিং হয়েছিল এবং উনি আমাদের সঙ্গে সব বিষয়ে একমত ছিলেন।
কিন্তু আমরা কী দেখলাম? ক্ষমতার চেয়ারে বসেই উনি আগের ফিল্ম সেন্সর নীতিমালা তো বাতিল করলেনই না; বরং ওটিটির জন্যও একটি সেন্সর নীতিমালা নিয়ে আসলেন! এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিল্মমেকারদের গলা চেপে ধরা, যাতে ওনাদের কোনও সমালোচনা না হয়। ফলে চলচ্চিত্র সেন্সর নীতিমালা সংশোধনের পাশাপাশি ওটিটি সেন্সর বাতিল করতে হবে। আপনি আমাদেরকে খেলতে বলবেন নেটফ্লিক্স-প্রাইমের সাথে আর হাত পা রাখবেন বেঁধে—এটা তো হয় না।’
সেন্সর প্রথা বাতিল করার আগের সময়টুকু নিয়েও বেশ সচেতন পরামর্শ দিলেন এই নির্মাতা। বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছি চলচ্চিত্র সেন্সর নীতি সংশোধনের আগ পর্যন্ত আপাতত কাজ চালানোর জন্য সেন্সর বোর্ডটা তো পুনর্গঠন করতে হবে। করেন সেটা। কিন্তু দয়া করে প্রাগৈতিহাসিক এফডিসির ততোধিক প্রাগৈতিহাসিক পরিচালক বা প্রযোজকদের এই কমিটিতে ঢোকানোর যে আজব অভ্যাস আছে, সেটা থেকে বের হয়ে আসেন। বাংলাদেশের নতুন দিনের ফিল্মমেকাররা প্রত্যেকেই এদের ঈর্ষার শিকার। কমিটিতে সেনসিবল লোকজন নেন প্লিজ। অনুদান কমিটিও একই রকমভাবে দলীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনের হাত থেকে উদ্ধার করেন। সেটা করার অনেক উপায় আছে। বিস্তারিত সাক্ষাতে।’
সেন্সর বোর্ড নিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই প্রতিক্রিয়া বা পরামর্শে এটুকু স্পষ্ট, তিনি বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নজরে আনতে চাইলেন। এমনকি চাইলেন মুখোমুখি বসতেও!
এটাও বলা দরকার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে নিজেকে উচ্চকিত রেখেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যা এখনও অব্যাহত।