বৈষম্যবিরোধী বিপ্লবের জেরে টলিউডের ‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমা থেকে বাদ পড়লেন ঢাকার প্রাক্তন এমপি চিত্রনায়ক ফেরদৌস। খবরটি ভারতীয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কলকাতার প্রযোজক রানা সরকার। কারণ হিসেবে স্পষ্ট করলেন, ফেরদৌস বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না! তাই তাকে সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হলো।
এদিকে এমনিতেই বড্ড দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই অভিনেতা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে অনেকটাই নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। মাঝে খবর এলো, আশ্রয় নিয়েছেন কলকাতায় বন্ধু ঋতুপর্ণার বাড়িতে। কিন্তু সেখান থেকেও ঋতু জানালেন, ফেরদৌস তার আশ্রয়ে নেই।
আন্দোলনের পক্ষে না থাকায় টলিউড থেকেও বাদ পড়লেন ফেরদৌস!
গত ১৮ আগস্ট ঋতুপর্ণা গণমাধ্যমে জানালেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক। ফেরদৌস আমার একজন ভালো বন্ধু, কিন্তু এ কথাটা তো একদমই এমন নয় যে সে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে আমার বাড়িতে উঠেছে! আমার মনেও হয় না, সে দেশ থেকে বেরিয়েছে। বের হলে আমরা তো জানতে পারতাম। বিষয়টা তো এমন নয় ফেরদৌস অপরিচিত মুখ। তার মতো মানুষ, দেশ থেকে বের হলে এমনিতে সবাই জানতে পারবে যে দেশ থেকে বেরোচ্ছে। আমার পরিষ্কার কথা, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক, বাংলাদেশের সবাই ভালো থাকুক।’
তবে আপাতত ফেরদৌস কোথায় কিংবা কেমন আছেন, সেটা ছাপিয়ে নজরকাড়া খবর এলো টলিউড থেকে। জানানো হলো, অর্কদীপ মল্লিকা নাথের ‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমা থেকে কেটে ফেলা হয়েছে ফেরদৌসের নাম।
- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাবে!
- ‘আয়নাঘর’-এ কেয়া পায়েল! মুক্তির অপেক্ষায়
- কোয়েল মল্লিককে এবার সিরিয়ালে দেখা যাবে
এ বিষয়ে সিনেমার প্রযোজক রানা সরকার ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, ‘এ সিনেমায় আর থাকছেন না ফেরদৌস। আমরা জেনেছি, বাংলাদেশে ছাত্রদের এই আন্দোলনে ফেরদৌসের কোনো ভূমিকা ছিল না। বরং ছাত্রদের বিপক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল। এখানে একটি পাবলিক সেন্টিমেন্টের ব্যাপার আছে। কারণ, সিনেমাটি দুই বাংলার দর্শকদের টার্গেট করে বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষত ছাত্রদের আবেগের কথা মাথায় রেখে। আমার কোনও সিনেমায় বাংলাদেশের এমন কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে অভিনয় করাবো না, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না। সে হিসেবেই ফেরদৌসকে আমরা সিনেমাটিতে রাখছি না। শুধু তাই-ই নয়, এই আন্দোলনে যেসব তারকা বিপক্ষে বা চুপ ছিলেন, তাঁদের কাউকেই এই ছবিতে নিতে চান না প্রযোজক।’
‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমায় স্বামী–স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল ফেরদৌস ও শ্রীলেখা মিত্রের। জানা গেছে, দুই বাংলায় মুক্তি দেওয়া হবে ছবিটি। এ জন্য ছবির গল্পও সেভাবে সাজানো হয়েছে। দুই বাংলার সীমান্তবর্তী মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, আদান–প্রদান, ভালো–মন্দ নিয়ে ছবিটির গল্প।
শায়েশা থেকে যে কোন ড্রেস অর্ডার করলেই পাবেন ডিস্কাউন্ট!
গত বছরের শুরুর দিকে অভিনয়শিল্পীদের লুক প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছিল ‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমার। তবে এখনও শুটিং শুরু হয়নি। ফেরদৌসের কারণেই কি এই বিলম্ব? জবাবে রানা সরকার বলেন, ‘২০২৩ সালেই শুটিং হওয়ার কথা ছিল, তবে সেটা সম্ভব হয়নি। ফেরদৌসের কারণে নয়, বিভিন্ন কারণে একটু দেরি হচ্ছে। যেহেতু এটার শুটিং হবে ভারতের মুর্শিদাবাদ-বাংলাদেশ সীমান্ত ও বাংলাদেশের কক্সবাজারে ছবির শুটিং করার কথা আছে, তাই সেখানে অনুমতির একটা বিষয় ছিলো।’
এদিকে ফেরদৌসকে বাদ দিয়েই বসে নেই সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে ফেরদৌসের পরিবর্তে বাংলাদেশের জিয়াউল রোশানকে মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন প্রযোজক রানা সরকার।
প্রযোজকের ভাষায়, ‘রোশানের সঙ্গে আমাদের কোনও ঝামেলা নেই। শুটিং শুরুর আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সে করতে চাইলে অবশ্যই সিনেমায় থাকবে।’
ছবিতে বাংলাদেশ থেকে অভিনয় করছেন জিয়াউল রোশানসহ আরও কয়েকজন। কলকাতা থেকে আছেন শ্রীলেখা মিত্র, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ দাস, প্রিয়াঙ্কা সরকার প্রমুখ।
বলা দরকার, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই চমক দেখিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জিতেছেন তিনি। পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৮৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী শামসুল আলম আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৭ ভোট।
১৯৯৮ সালে বাসু চ্যাটার্জির ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমা দিয়ে তার রাজকীয় অভিষেক হয়। এরপর মাঝের দুই দশক দুই বাঙলায় অসংখ্য সফল সিনেমা করেন তিনি। ‘মিট্টি’ সিনেমা দিয়ে নাম লেখান বলিউডেও। এ বছর ঢালিউডের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছটকু আহমেদের ‘আহারে জীবন’। যা তুমুল ফ্লপ করে।
সিনেমায় নায়ক ফেরদৌসের অভিষেক ১৯৯৭ সালে, ‘বুকের ভিতর আগুন’ ছবির মাধ্যমে। যেখানে মূলত প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন করতে যোগ দেন তিনি। তবে ফেরদৌসকে নায়ক হিসেবে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয় যে ছবিটি, সেটার নাম ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল এটি।