পৃথিবীর শেষ রাস্তা বলেও একটি জায়গা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এর পরে নাকি আর কোন রাস্তাই নেই। দীর্ঘ এক পথ। আলো-অন্ধকারে মোড়া। বরফে ঢাকা। দীর্ঘ নিঃসঙ্গ ভয়বিহ্বল এক পথ। রাস্তাটিকে মুখে বলা হয়ে থাকে ‘দ্য লাস্ট রোড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ তবে এর আসল নাম E 69 Highway। নরওয়ের উত্তরমেরুর সঙ্গে এই রাস্তাটি যুক্ত রয়েছে।
পৃথিবীর “শেষতম রাস্তা” বলতে আমরা মূলত সেই রাস্তা বুঝি যা পৃথিবীর সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। এমন একটি রাস্তা দক্ষিণ আমেরিকার চিলি ও আর্জেন্টিনার মধ্যে অবস্থিত। এই রাস্তার নাম হলো “রুট ৩” বা “Ruta 3,” যা আর্জেন্টিনার সর্বদক্ষিণে উশুয়াইয়া শহরে শেষ হয়। উশুয়াইয়া শহরটি পৃথিবীর সর্বদক্ষিণে অবস্থিত শহরগুলির মধ্যে একটি এবং একে “The End of the World” বা “পৃথিবীর শেষ প্রান্ত” বলা হয়।
রুট ৩ রাস্তা আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৩,০৬৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে উশুয়াইয়াতে শেষ হয়। উশুয়াইয়া শহরটি টিয়েরা দেল ফুয়েগো দ্বীপে অবস্থিত এবং এই রাস্তাটি সাধারণত পর্যটক এবং অভিযাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয়, যারা অ্যান্টার্কটিকা যাত্রা করেন।
চিলির অংশে, রুট ৩ রাস্তার সমতুল্য একটি রাস্তা আছে যার নাম “Ruta Y-85,” যা পুয়ের্তো উইলিয়ামসে শেষ হয়। পুয়ের্তো উইলিয়ামস হলো পৃথিবীর দক্ষিণতম শহর হিসাবে পরিচিত এবং এটি নাভারিনো দ্বীপে অবস্থিত।
এই রাস্তাগুলি পৃথিবীর অন্যতম প্রান্তে অবস্থিত এবং সেগুলি অভিযাত্রী ও পর্যটকদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
পৃথিবীর শেষতম রাস্তা! এখানেই এসে থেমেছে উত্তরমেরু, কী আছে ‘ই ৬৯’-এর ওপারে? এই রাস্তা কি আকাশে গিয়ে মিশেছে? তবে কি এটাই স্বর্গের রাস্তা!
উত্তর মেরু। পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তর প্রান্ত (Last Road of The World)। উত্তরমেরু পেরিয়ে আরও উত্তরে গেলে কি পৃথিবী শেষ?
পৃথিবীর শেষতম রাস্তা! এখানেই এসে থেমেছে উত্তরমেরু, কী আছে ‘ই ৬৯’-এর ওপারে❓
গোলাকৃতি বস্তুর আসলে কোনও অন্ত নেই। মানচিত্রের ভাষা বলছে, উত্তরমেরু পেরিয়ে আরও উত্তরে এগোতে চাইলে কখনও হয়তো দক্ষিণমেরুর দেখা মিলবে। কিন্তু পৃথিবীর উত্তরপ্রান্ত তো এখানেই শেষ! এখানেই তাই রয়েছে পৃথিবীর শেষতম রাস্তা।
এই রাস্তায় একা যাওয়া একেবারেই বারণ। পরতে পরতে বিপদ! গরমকালেও বরফ থাকে এই রাস্তায়! আবহাওয়ার বদল যখন তখন হয়। মুহূর্তে তুষার ঝড় ওঠে! আবার বিরাট বিরাট টানেলও আছে এই রাস্তায়।
উত্তরমেরুর দেশ নরওয়ে (Norway)। পৃথিবীর শেষ রাস্তাটাও এখান থেকেই শুরু হয়েছে। এ রাস্তার নাম ই-৬৯ (E 69)। পৃথিবীর শেষ প্রান্তগুলি সংযুক্ত করে তৈরি হয়েছে এই রাস্তা। সারা বিশ্বের সমস্ত কোলাহল, ঘটনাপ্রবাহ এই পথেই এসে এক্কেবারে থমকে যায়। ই-৬৯’এ দাঁড়িয়ে কারও আর বলার উপায় নেই ‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত…’ এ রাস্তার ওপারে আর কোনও রাস্তা নেই। কেবল দীগন্ত বিস্তৃত সাদা বরফ আর উথালপাথাল সমুদ্র।
গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন উপলক্ষে গিফট!
ই-৬৯ আসলে ঠিক রাস্তা নয়, এটা একটা হাইওয়ে। দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। নরওয়ের বাসিন্দারা এই রাস্তা ব্যবহার করেন বটে, তবে পৃথিবীর শেষতম এই রাস্তায় একা একা হাঁটাচলা বা গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। দুজন বা তিনজনকেও এ রাস্তায় চলার অনুমতি দেওয়া হয় না। কেবল অনেকে একসঙ্গে থাকলে তবেই এই রাস্তায় পা রাখা যায়।
ই-৬৯ এমন একটা রাস্তা যার চারদিকে বরফের গুঁড়ো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সারাক্ষণ। শুনশান এই রাস্তা দিয়ে একা হাঁটা বিপজ্জনক। পা পিছলে তো যেতেই পারে। তার চেয়ে বড় কথা, এ রাস্তা দিয়ে একা চলতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই একসঙ্গে দল না বাঁধলে ই-৬৯’এ পা রাখা মুশকিল।
পৃথিবীর এই শেষ রাস্তাটি উত্তর গোলার্ধে অর্থাৎ নিরক্ষরেখার ঠিক উপরের দিকে। রাস্তাটিকে কেন পৃথিবীর শেষ রাস্তা বলা হয়, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্ন ভূ-বিজ্ঞানীরা!
নরওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ই-৬৯’ও ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে না। এ রাস্তায় তাই শীতকালে কখনও রাত শেষ হতে চায় না, দিনের পর দিন দেখাই দেয় না সূর্য। আর গরমকালে এই রাস্তায় দিনরাত সূর্য জ্বলে থাকে উজ্জ্বল আলোয়। টানা ৬ মাস সূর্য ডোবে না।
শীতের সময় পৃথিবীর এই শেষ প্রান্তে তাপমাত্রা কখনও কখনও পৌঁছে যায় -৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর গ্রীষ্মে ই-৬৯’এ তাপমাত্রার পারদ থাকে শূন্য ডিগ্রি ছুঁয়ে।
পাঁচটি ট্যানেল পার হয়ে ওই রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে সবথেকে যে লম্বা ট্যানেলটি রয়েছে তা হল ‘নর্থ কেপ’। ওই ‘নর্থ কেপ’-এর ৬.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই ‘নর্থ কেপ’ ট্যানেলটি গিয়ে পৌঁছয় সমুদ্রতলের ২১২ মিটার নিচে। সেখানেই শেষ রাস্তা।
যে কোন ড্রেস অর্ডার করলেই পাবেন ডিস্কাউন্ট!
পৃথিবীর এই শেষ প্রান্তেও কিন্তু মানুষ বসবাস করে। আগে এখানে শুধু মাছের চাষ হত। এখানকার বাসিন্দাদেরও ওই একটিই জীবিকা ছিল। ১৯৩০ সালের পর থেকে এই অঞ্চলটি একটু একটু করে উন্নত হয়। এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হয় সেই তখন থেকেই।
আজ নরওয়েতে পৃথিবীর এই শেষতম রাস্তায় পা রাখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পর্যটকরা। উত্তরমেরুর ঠান্ডা সেই উৎসাহের কাছে তুচ্ছ। পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারার রোমাঞ্চ গায়ে কাঁটা দেয় সকলের।
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে যাওয়ার উপায়?
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে যাওয়ার জন্য, যেখানে উশুয়াইয়া বা পুয়ের্তো উইলিয়ামস অবস্থিত, সেখানে পৌঁছানোর জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। উশুয়াইয়া এবং পুয়ের্তো উইলিয়ামস দুইটিই দক্ষিণ আমেরিকার সর্বদক্ষিণের শহর এবং পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণের বাসযোগ্য স্থানের মধ্যে অন্যতম। এখানে উভয় গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায়গুলি তুলে ধরা হলো:
উশুয়াইয়া, আর্জেন্টিনা:
- বিমানপথে:
- উশুয়াইয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ইউএসএইচ) আর্জেন্টিনার প্রধান শহর বুয়েনোস আইরেস এবং অন্যান্য বড় শহর থেকে ফ্লাইট সরবরাহ করে। বুয়েনোস আইরেস থেকে উশুয়াইয়ায় সরাসরি ফ্লাইট সবচেয়ে দ্রুত এবং সুবিধাজনক উপায়।
- সড়কপথে:
- আপনি আর্জেন্টিনার রুট ৩ ধরে গাড়ি চালিয়ে উশুয়াইয়া পৌঁছাতে পারেন। এটি একটি দীর্ঘ যাত্রা, তবে এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর পথ যা আপনাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে।
- জাহাজে:
- অনেক ক্রুজ এবং অভিযাত্রী জাহাজ উশুয়াইয়া থেকে অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত যাত্রা করে এবং এই পথে উশুয়াইয়া একটি প্রধান স্টপ। বিভিন্ন ক্রুজ কোম্পানি এখানে বিভিন্ন ধরণের যাত্রা সরবরাহ করে।
পুয়ের্তো উইলিয়ামস, চিলি:
- বিমানপথে:
- পুয়ের্তো উইলিয়ামসের জন্য চিলির পুন্তা অ্যারেনাস শহর থেকে সরাসরি ছোট বিমানগুলি চলে। পুন্তা অ্যারেনাস হলো দক্ষিণ চিলির একটি বড় শহর যা বিমানে সান্তিয়াগো থেকে পৌঁছানো যায়।
- সড়কপথ ও ফেরি:
- পুন্তা অ্যারেনাস থেকে আপনি ফেরি ব্যবহার করে নাভারিনো দ্বীপে পৌঁছাতে পারেন। ফেরি যাত্রা প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় নেয় এবং এটি দক্ষিণ প্যাটাগোনিয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য একটি সুন্দর উপায়।
- জাহাজে:
- পুয়ের্তো উইলিয়ামস থেকেও কিছু ক্রুজ এবং অভিযাত্রী জাহাজ অ্যান্টার্কটিকা যাত্রা করে, যা পুয়ের্তো উইলিয়ামসকে একটি প্রধান স্টপ বানিয়ে দেয়।
অতিরিক্ত টিপস:
- উভয় স্থানেই যাত্রার সময় এবং আবহাওয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। এই অঞ্চলগুলোতে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে।
- যাত্রার আগে যথাযথ পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন সুবিধা সীমিত হতে পারে।
উশুয়াইয়া এবং পুয়ের্তো উইলিয়ামস উভয়ই অভিযাত্রী ও পর্যটকদের জন্য এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে এবং এই যাত্রার মাধ্যমে আপনি প্রকৃতির চূড়ান্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ কমেন্ট করার অনুরোধ করছি।